কাতান শাড়ি তো অনেকেই পরেন কিন্তু এর ইতিহাস কজন জানেন !
শাড়ি শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শাটি শব্দ থেকে যার অর্থ হচ্ছে এক ফালি কাপড়। পরবর্তীতে এটি প্রাকৃত এর বিবর্তনের কারনে শাড়ি বা সাত্তিকা শব্দ হতে শাড়ি শব্দে পরিনত হয়েছে। সম্ভবত ইতিহাসের প্রাচীনতম পরিধেয় বস্ত্র হচ্ছে শাড়ি। যার জনপ্রিয়তা এখনও বিদ্যমান। কখন কিভাবে শাড়ির উৎপত্তি হয়েছিল সেই ইতিহাস খুব একটা স্পষ্ট বলা মুশকিল। শাড়ী হচ্ছে সেলাই বিহীন বস্ত্র একটি খণ্ড। শাড়ির উৎস হচ্ছে ২৮০০ খ্রীস্টপূর্ব থেকে ১৮০০ খ্রীস্টাব্দ এর দিকে যা সিন্ধু সভ্যতার সময় চিন্হিত করে আসছে। কাতান শাড়ি মুলত তৈরি করা হয় রেশমি সুতা ও সিল্ক সুতা দিয়ে। ২৪৫০ খ্রীস্টপূর্ব থেকে ২০০০ খ্রীস্টাব্দ এর দিকে সিল্ক ও রেশম চাষ হওয়ার কারনে তখন থেকে রেশম কাপড়ের প্রচলন শুরু হয়। কাতান শাড়ির প্রচলন শুরু হয় ১৯৪৭ সালের দিকে। তখন থেকে দেশ বিভাগের পর ভারতের বেনারস শহর থেকে মুসলমান তাঁতিরা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে অর্থাৎ বর্তমানে বাংলাদেশে চলে আসেন। বাংলাদেশের তাঁতিরা তাদের নিজস্ব সৃজনশীলতা, নান্দনিক ডিজাইনের মাধ্যমে উন্নত রুচির পরিচয় দিচ্ছে বহু বছর ধরে এই কাতান শাড়ীতে।
[maxbutton id=”1″ url=”https://mehzin.net/shop/” ]
শাড়ি হচ্ছে ১২ হাতের একটি ক্যানভাস। শাড়ী ১২ হাতে ফুটে ওঠে কত রকমের নকশা, ভিন্ন ভিন্ন কারুকাজ। শাড়িকে বলা হয় বাংলাদেশী নারীদের জাতীয় পোশাক। নৈমিত্তিক এবং আনুষ্ঠানিকতায় শাড়ি হচ্ছে বাংলাদেশী নারীদের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি পোশাক। শাড়ি ভালোবাসেনা এমন বাঙালি মেয়ে পাবেন খুবই কম। কত রকমের ভিন্ন নামের নানান নকশার শাড়ি আছে। কত রকম সুতা ব্যবহিত হচ্ছে শাড়ী বুনন কাজে। শাড়ি ছাড়া নারী যেন এক অসম্পূর্ণ সৌন্দর্য বয়ে বেরায়। টঙ্গাইল, মসলিন, বেনারসি, জামদানী ও কাতান নানান রকম শাড়ি শোভা পাচ্ছে নারীর সৌন্দর্যে। কাতান শাড়ির সমারোহ অন্য রকম মাধুর্য বহন করে। আর একটি লাল টুকটুকে কাতান শাড়ি-ই পারে কনেকে সবার থেকে আলাদা করে রাখতে।
কাতান শাড়িঃ
শাড়ির ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে রয়েছে কাতান শাড়ি। সময় বদলের সঙ্গে সঙ্গে কাতানের নকশার বুনন আর রঙে এসেছে নানা রকমের পরিবর্তন। যুগ যুগ ধরে বদলে এসেছে শাড়ির পাড়, আচল ও বুনন এর কৌশল। বাংলাদেশের তাঁতিরা বছরের পর বছর কাতান শাড়ি বুনছে আপন সৃজনশীলতা দিয়ে। বেনারসি শাড়ির আরেকটি হচ্ছে কাতান শাড়ি।
দেশ বরেণ্য ফ্যাশন ডিজাইনার হচ্ছে এমদাদ হক। তার ভাষ্যমতে জ্যাকার্ড হ্যান্ডলুমে টানা ভরনায় দেওয়া আছে রেশম সুতো আর তাঁতির বুননের সাথে সাথে জমিনে ভেসে উঠেছে বেনারসি মোটিফের লতা, কলকা, ফুল ইত্যাদি। এর নাম হচ্ছে কাতান শাড়ি। বিয়েতে উজ্জ্বল বাহারি রঙের কারুকাজের শাড়ির সমারোহ অন্যরকম এক মাধুর্য নিয়ে আসে। হালকা কাজে বা এক কালারের সাথে গাঢ় পাড়ের কাতান শাড়ি ব্যবহার করে থাকেন অনেক নারীরা। সাধারণত উৎসবে, পার্টিতে, বিয়ের অনুষ্ঠানে, কাতান শাড়ি বেশি ব্যবহার করা হয়। আনন্দঘন মুহুর্তকে আরও আনন্দিত করতে কাতান শাড়ির জুড়ির কোন তুলনা নেই। বিয়ে এবং বৌভাতের অনুষ্ঠানে বিয়ের কনেকে কারুকার্য মন্ডিত উজ্জ্বল রঙের দেখাতে বেনারসি বা কাতান শাড়ি পড়িয়ে সাজানো হয়। আধুনিকতার সাথে সাথে কাতান শাড়ির চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
কাতান শাড়ির বৈশিষ্ট্যঃ
কাতান শাড়ির ঐতিহ্য ও আভিজাত্য বাঙালি বধুর সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে আরো দ্বিগুণে। কাতান শাড়ি আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয় লাভ পাচ্ছে। মেয়েরা বেড়াতে গেলে বা অনুষ্ঠানে গেলে প্রথম পছন্দের তালিকায় প্রথম কাতান শাড়িকে রাখে। কারন এ শাড়ি খুব সহজেই সামলানো যায়। এর ওজন হাল্কা এছাড়া এই শাড়ি দেখতে খুব সুন্দর দেখায়। শাড়িতে থাকে নানান রকমের কারুকাজ। উজ্জ্বল রঙের যেকোনো শাড়ি যেকোনো বয়সের নারীকে মানিয়ে তুলে খুব সহজেই। এক কালারের কাতান হলেও আঁচল আর পাড়ে বিভিন্ন নকশা করা হয়। কাতান শাড়ির অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে এর উজ্জ্বলতা। যেটির কারনে খুব গর্জিয়াস লুক দেখায়। নেট কাতান শাড়ি গুলো প্রায় সব নারীরাই ব্যবহার করতে পারে। যদিও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শাড়ি বলতে আধুনিক ঘরানার শাড়িকেই জনপ্রিয় করা হয়েছে তবে উপমহাদেশের প্রতিটি অঞ্চলেই নিজস্ব ধরনের শাড়ির তৈরি ও জনপ্রিয়তা রয়েছে খুব।
কাতান শাড়ির জনপ্রিয়তাঃ
সেই সুদূর সুলতানি অথবা মুঘল আমল থেকেই বাঙালি নারিদের কাতান শাড়ি পরিধান করার রীতি উল্লেখযোগ্য হারে চোখে পড়ে সবার। আর কাতান শাড়ি ছাড়া এদেশের বড় ধর্মীয় উৎসব কিংবা বিয়ের অনুষ্ঠান সমূহ যেন জমে উঠে না। আর একটি লাল টুকটুকে কাতান শাড়ি-ই পারে কনেকে সবার থেকে আলাদা করে রাখতে। কাতান ছাপিয়ে মাঝের সময়টুকুতে বিদেশি শাড়িগুলোর চাহিদা খুব বেড়ে গিয়েছিল। আাবার হঠাৎদেশীয় শাড়ির জনপ্রিয়তা ফিরে এসেছে।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বা পার্টিতে শাড়ী পড়ার জন্য খুব সুন্দর সুন্দর কালেকশনের শাড়ী পেয়ে যাবেন প্রণয়িনীতে। যা পড়লে আপনাকে অন্য সবার থেকে আলাদা লাগবে এবং খুব সুন্দর দেখাবে এতে।