বাংলাদেশের গ্রীষ্মকাল মানেই রোদের ঝলক, ঘামের ছটা আর একরাশ অস্বস্তি। বড়দের জন্য যেমন গরমের সময় পোশাক বাছাই করা জরুরি, ছোট্ট শিশুদের জন্য সেটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বাচ্চাদের ত্বক অনেক বেশি কোমল ও সংবেদনশীল। ভুল পোশাক তাদের অস্বস্তি, ফুসকুড়ি, এমনকি অসুস্থ করে তুলতে পারে। তাই গরমের দিনে বেবি ড্রেস বাছাইয়ের সময় প্রয়োজন একটু বাড়তি যত্ন, একটু বাড়তি ভালোবাসা। আজকের ব্লগে আমরা জানব গরমের দিনে শিশুদের জন্য কোন ধরনের জামা সবচেয়ে উপযুক্ত, কোন কাপড় আর রঙ বেছে নেবেন, কীভাবে ফ্যাশন আর আরামের ভারসাম্য রাখবেন, আর কীভাবে আপনার ছোট্ট রাজকন্যা বা রাজপুত্রকে গ্রীষ্মকালেও হাসিখুশি ও স্টাইলিশ রাখবেন।
শিশুরা বড়দের তুলনায় অনেক বেশি সংবেদনশীল। তাদের ত্বক পাতলা, ঘামগ্রন্থি এখনও ভালোভাবে কাজ করে না। ফলে গরমে ভারী কাপড়, আঁটসাঁট জামা, কৃত্রিম ফ্যাব্রিক বা গাঢ় রঙের পোশাক তাদের জন্য একেবারেই অনুপযুক্ত। এতে শিশুরা শুধু অস্বস্তিই বোধ করে না, বরং ফুসকুড়ি, ঘামাচি, এমনকি ত্বকের সংক্রমণও হতে পারে। তাই গ্রীষ্মে বেবি ড্রেস মানেই-আরাম, হালকা, শ্বাস-প্রশ্বাসযোগ্য কাপড় আর সতেজ রঙ।
গরমের সময় শিশুদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কাপড়ের ধরন। সুতি বা কটন কাপড় এই সময়ের জন্য সেরা। কারণ, এটি নরম, শিশুর ত্বকের জন্য নিরাপদ এবং সহজেই ঘাম শুষে নেয়। এছাড়া লিনেন কাপড়ও বেশ জনপ্রিয়। এটি হালকা, বাতাস চলাচল করতে পারে এবং দ্রুত শুকিয়ে যায়। বাঁশ ফাইবারের কাপড়ও এখন অনেক মা-বাবার পছন্দ, কারণ এটি অ্যালার্জি কমায়, আরামদায়ক এবং টেকসই। তবে সিন্থেটিক, নাইলন, পলিস্টার বা রেশমের মতো কাপড় গরমে শিশুর জন্য একেবারেই এড়িয়ে চলা উচিত। এগুলোতে ঘাম আটকে যায়, শিশুর ত্বকে জ্বালা বা অ্যালার্জি হতে পারে।
গরমে হালকা রঙের জামা শিশুর জন্য সবচেয়ে ভালো। কারণ, হালকা রঙ সূর্যের তাপ কম শোষণ করে, ফলে শিশুর শরীর তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা থাকে। সাদা, হালকা নীল, গোলাপি, প্যাস্টেল, হলুদ, হালকা সবুজ-এসব রঙ গরমের জন্য আদর্শ। গাঢ় রঙ যেমন কালো, গাঢ় নীল, লাল ইত্যাদি গরম শুষে রাখে, তাই গ্রীষ্মে এড়িয়ে চলাই ভালো।
শিশুদের পোশাকে কার্টুন, পশুপাখি, ফুলের প্রিন্ট দারুণ জনপ্রিয়। এতে শিশুরা যেমন খুশি হয়, তেমনি ফটোতেও বেশ সুন্দর দেখায়।
গরমের সময় শিশুদের জন্য সবচেয়ে ভালো হয় ঢিলেঢালা, হালকা ও সহজে পরা যায় এমন পোশাক। ছোট মেয়েদের জন্য ফ্রক, গাউন, ওয়ানপিস, রম্পার, স্কার্ট-টপস দারুণ আরামদায়ক। ফ্রক বা গাউনের নিচে সাধারণত কিছু পরতে হয় না, ফলে শিশুর শরীর সহজেই বাতাস পায়। রম্পার বা ওয়ানপিসও খুব জনপ্রিয়, কারণ এতে ডায়াপার বদলানো সহজ, আর শিশুরা খেলাধুলা বা ঘুমের সময়ও আরাম পায়।
ছোট ছেলেদের জন্য কটন শার্ট, টি-শার্ট, শর্টস, লুজ ট্রাউজার, রম্পার ইত্যাদি সবচেয়ে ভালো। এগুলোতে শিশুরা সহজে দৌড়াতে, খেলতে বা ঘুরে বেড়াতে পারে।
2. ঢিলেঢালা পোশাক বেছে নিন, যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে।
3. ছোট হাতা বা স্লিভলেস জামা গরমে বেশি আরামদায়ক।
4. বাইরে গেলে শিশুকে টুপি বা সান হ্যাট দিন, যাতে সূর্যের তাপ থেকে মাথা ও মুখ রক্ষা পায়।
5. পায়ের জন্য আরামদায়ক স্যান্ডেল বা ফ্লিপ-ফ্লপ দিন, যাতে পা ঘামে না।
6. বাইরে গেলে ব্যাগে অতিরিক্ত জামা রাখুন, কারণ শিশুরা ঘেমে গেলে বা জামা নোংরা হলে দ্রুত পাল্টে দেওয়া যায়।
7. জামার সাথে ভারী কোনো এক্সেসরিজ বা গহনা পরাবেন না, এতে শিশুর অস্বস্তি বাড়ে।
2. লেস ও মুক্তার কাজের গাউন
3. ফুলের নেটের ফ্রক
4. কোমরে বেল্ট বা বো-টাই
5. হালকা রঙের সাটিন বা কটন গাউন
এছাড়া হালকা রঙের হেয়ারব্যান্ড, ছোট্ট ক্লিপ, নরম স্যান্ডেল বা জুতো শিশুর পার্টি লুককে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে।
আজকাল অনলাইন শপে নানা ডিজাইন, রঙ, সাইজের বেবি ড্রেস সহজেই পাওয়া যায়। ঘরে বসেই অর্ডার, হোম ডেলিভারি, আর দামেরও তুলনামূলক সুবিধা। অনলাইনে কেনাকাটার সময় অবশ্যই সাইজ, কাপড়ের কোয়ালিটি ও রিটার্ন পলিসি দেখে নিন।
ফ্যাশনের চেয়ে শিশুর আরাম ও নিরাপত্তা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জামা যেন আঁটসাঁট না হয়, কাপড় যেন শিশুর ত্বকে অ্যালার্জি না দেয়, ভারী কোনো গহনা বা এক্সেসরিজ যেন না থাকে-এসব বিষয় খেয়াল রাখুন।
2. শিশুকে প্রচুর পানি পান করান।
3. ঘন ঘন জামা বদলান, যাতে ঘাম বা ধুলাবালি জমে না থাকে।
4. অতিরিক্ত পাউডার বা লোশন ব্যবহার কমান, কারণ এতে শিশুর ত্বক বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
5. শিশুকে বেশি সময় রোদে রাখবেন না।
6. ঘর ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করুন।
7. বেবি ড্রেস কেয়ার টিপস
8. শিশুর জামা পরিষ্কার ও নরম রাখতে কিছু কেয়ার টিপস মেনে চলুন-
9. শিশুর জামা আলাদা করে ধুয়ে নিন।
10. খুব বেশি ডিটারজেন্ট ব্যবহার করবেন না।
11. জামা ভালোভাবে শুকিয়ে নিন, যেন কোনো আর্দ্রতা না থাকে।
12. নতুন জামা পরানোর আগে অবশ্যই একবার ধুয়ে নিন।
প্রথমবার মা হওয়ার পর গরমকালে নিজের সন্তানের জন্য জামা বাছাই করা এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। আমার মেয়ের জন্য প্রথম গ্রীষ্মে নানা রকম ফ্রক, রম্পার, ওয়ানপিস কিনেছিলাম। শুরুতে বুঝতে পারিনি, কোনটা আরামদায়ক, কোনটা নয়। পরে দেখলাম, কটন ফ্রক আর ঢিলেঢালা রম্পারেই ও সবচেয়ে বেশি হাসে, খেলাধুলা করে। গাঢ় রঙের বা ভারী কাজের জামা পরালেই মুখ ভার করে বসে থাকে। তখন বুঝলাম, শিশুর জন্য আরামই সবার আগে।
শিশুরা স্বাভাবিকভাবেই সুন্দর। তাদের সাজানোর জন্য বেশি কিছু দরকার হয় না। গরমে শুধু হালকা, আরামদায়ক, রঙিন জামা আর ছোট্ট একটা টুপি বা হেয়ারব্যান্ডই যথেষ্ট। চাইলে কিউট প্রিন্টের রম্পার, ফুলের ফ্রক, কার্টুন প্রিন্টেড টি-শার্ট বা শর্টস পরাতে পারেন।
গরমের দিনে বেবি ড্রেস মানে শুধু ফ্যাশন নয়, বরং আরাম, স্বাস্থ্য আর ভালোবাসা। ছোট্টদের জন্য বেছে নিন হালকা, রঙিন, আরামদায়ক পোশাক। ফ্যাশন হোক, কিন্তু শিশুর স্বস্তি আর নিরাপত্তাই হোক সবার আগে।
আপনার ছোট্ট রাজকন্যা বা রাজপুত্রের জন্য কোন ড্রেসটি সবচেয়ে পছন্দের? তাদের গ্রীষ্মকালীন ফ্যাশন নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন? নিচে কমেন্টে লিখে জানান!
শিশুর হাসি, আপনার স্টাইল-গরমের দিনে বেবি ড্রেসে থাকুক আরাম আর আনন্দ!
লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন, আর আপনার ছোট্ট শিশুর গ্রীষ্মকালীন ফ্যাশনের ছবি আমাদের পাঠাতে ভুলবেন না!